বই ।। গল্পের বই ।। গল্পের বই ।। গল্পের বই
শেখর বসুর গল্প সম্পর্কে কয়েকটি অভিমত
“শেখরের লেখার স্টাইল আমার খুব পছন্দ। স্পষ্ট, প্রত্যক্ষ, নিরলংকার গদ্য যে কোনও কোনও গল্পের ক্ষেত্রে কতটা উপযোগী হতে পারে, শেখরের অনেক গল্পেই তার প্রমাণ আছে।”
“শেখরের অন্যতম আরেক গুণ তিনি স্বল্প কথায় এক-একটি ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারেন আশ্চর্যভাবে। আসলে শেখরের লেখার মধ্যে চিত্র আঁকার একটি ভাব বরাবর থেকে যায়। এখানে তাঁর দক্ষতাকে মেনে নিতেই হয়।”
“শেখর ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রথম যে গল্পটি লিখেছিল, সে গল্পটির নাম ‘টাঙ্গি’।… শেখরের ‘টাঙ্গি’ গল্পটি নানা কারণেই উল্লেখযোগ্য, কিন্তু সবচেয়ে যেটি আশ্চর্যের কথা, তা হল, এই গল্পটি সম্পর্কে আমি নানা মহলে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শুনেছি।”
প্রখ্যাত লেখক বিমল কর
“মনে পড়ছে কদিন আগে শেখর একটি গল্প লিখেছে ‘মাঝখান থেকে’ (‘দেশ’ পত্রিকায়), বেশ জোরালো গল্প, সে গল্পে আছে না-বলে কথা বোঝানোর এক বিপজ্জনক বিবরণ।”
বিশিষ্ট কবি শঙ্খ ঘোষ, তাঁর ‘জার্নাল’ গ্রন্থে।
“আমার প্রিয় তরুণ লেখকদের তালিকায় শেখর বসুর নামটা যোগ করবেন।”
![ponchastiGolpo-sekhar basu ponchastiGolpo-sekhar basu](https://sekharbasubooks.com/wp-content/uploads/2021/08/ponchastiGolpo-sekhar-basu.jpg)
পঞ্চাশটি গল্প ।। আনন্দ পাবলিশার্স। প্রকাশকাল ২০১১। শেখর বসুর পাঁচ দশকের নির্বাচিত গল্পের অনবদ্য এক সংকলন। লেখকের গল্পজীবনের পথপরিক্রমা ও উত্তরণের সন্ধানও পাওয়া যাবে। গল্পগুলি প্রকাশিত হয়েছিল কলকাতার সমস্ত প্রধান পত্রপত্রিকায়।
জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী (নতুন ধারার এই শক্তিশালী লেখক ১৯৮১ সালে লেখা একটি ব্যক্তিগত চিঠিতে তাঁর জীবনীকার ও গবেষক নিতাই বসুকে এই নির্দেশটি দিয়েছিলেন। জ্যোতিরিন্দ্র প্রয়াত হওয়ার ২৬ বছর পরে ২০০৭ সালের শারদীয় ‘অনুষ্টুপ’ পত্রিকায় গবেষকের বিস্তৃত নোটসহ চিঠিটি ছাপা হয়েছিল।)
গল্প লেখা চলছে পাঁচটি দশক ধরে
‘দশটি গল্প’ শেখর বসুর প্রথম বই। প্রকাশকাল ১৯৬৯ । ‘এই দশক’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে ‘শাস্ত্রবিরোধী ছোটগল্প আন্দোলন’-এর তৃতীয় বছর চলছে তখন। আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব শেখর বসুর নতুন ধারার দশটি গল্প এই সংকলনে স্থান পেয়েছে। দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘মাঝখান থেকে’। প্রকাশকাল ১৯৮১। আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত এই বইয়ের ১৯টি গল্পই দেশ ও আনন্দবাজারে প্রকাশিত। অন্যান্য গল্পের বইগুলি হল ‘পরম্পরা’ (১৯৮৯), ‘তিনটি ভালোবাসা দুটি মৃত্যু’ (১৯৯০), ‘মায়ানগরের রাত’ (১৯৯২), ‘ভালোবাসা’ (১৯৯৪), ‘স্বনির্বাচিত শ্রেষ্ঠ গল্প’ (১৯৯৮), ‘লঘু পাপে’ (২০০৯), ‘পঞ্চাশটি গল্প’ (২০১১) ; আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত এই গল্পগ্রন্থে ২৫টি গল্প লেখকের বিভিন্ন গল্পসংকলন থেকে নির্বাচিত, বাকি ২৫টি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত, কিন্তু অগ্রন্থিত। এই গল্পগুলি তেতাল্লিশ বছর কালসীমার মধ্যে রচিত। ‘প্রিয় গল্প’ (২০১৮) ; দ্য কাফে টেবল সংস্থা থেকে প্রকাশিত ২৫টি নির্বাচিত গল্পের সংকলন।
![priyoGolpo-Sekhar Basu priyoGolpo-Sekhar Basu](https://sekharbasubooks.com/wp-content/uploads/2021/08/priyoGolpo-Sekhar-Basu.jpg)
প্রিয় গল্প ।।
দ্য কাফে টেবল। প্রকাশকাল ২০১৮। সম্প্রতি রচিত লেখকের বাছাই-করা ২৫টি গল্পের সংগ্রহযোগ্য সংকলন। বিভিন্ন প্রধান পত্রিকায় প্রকাশিত গল্পগুলি এই প্রথম গ্রন্থভুক্ত হল।
বাকি সব ছোটগল্পের বই ......
![দশটি গল্প - শেখর বসু](https://sekharbasubooks.com/wp-content/uploads/2021/08/doshti-golpo-sekhar-basu.jpg)
![মাঝখান থেকে - শেখর বসু](https://sekharbasubooks.com/wp-content/uploads/2021/08/majhkhan-theke-sekhar-basu.jpg)
![পরম্পরা - শেখর বসু](https://sekharbasubooks.com/wp-content/uploads/2021/08/porompora-sekhar-basu.jpg)
![তিনটি ভালোবাসা দুটি মৃত্যু - শেখর বসু](https://sekharbasubooks.com/wp-content/uploads/2021/08/tinti-valobasa-duti-mrittu-sekhar-basu.jpg)
![moynagorer rat - sekhar basu](https://sekharbasubooks.com/wp-content/uploads/2021/08/moynagorer-rat-sekhar-basu.jpg)
![ভালোবাসা - শেখর বসু](https://sekharbasubooks.com/wp-content/uploads/2021/08/valobasa-sekhar-basu.jpg)
![sonirbachito srestho golpo - sekhar basu](https://sekharbasubooks.com/wp-content/uploads/2021/08/sonirbachito-srestho-golpo-sekhar-basu.jpg)
![লঘু পাপে - শেখর বসু](https://sekharbasubooks.com/wp-content/uploads/2021/08/loghu-pape-sekhar-basu.jpg)
শেখর বসুর গল্প: বিমল কর
শেখরের লেখা সম্পর্কে আলোচনা করার আগে অন্য একটি প্রসঙ্গ এসে যায় । নিজের লেখা এবং তাঁর সাহিত্যভাবনা বিষয়ে উনি কী বলেন জানতে আগ্রহ হতে পারে । অনেকে হয়ত বলবেন, লেখকের লেখাটাই বিবেচ্য, তাঁর নিজের মতামতের কোনো মূল্য নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি তা মনে করি না। যে লেখক শখ করে দুটি-পাঁচটি গল্প লিখেই ক্ষান্ত নন, দীর্ঘ সময় নিজের মতো করে লিখে যাচ্ছেন—তাঁকে যদি বোঝার চেষ্টা করতেই হয়, তবে তাঁর কথাও শোনা দরকার। তাতে লাভ বই ক্ষতি নেই।
অনেক দিন আগে, শেখর যখন গল্প-লেখক হিসেবে পাঠকের কাছে পরিচিত, তখন নিজের লেখা সম্পর্কে কিছু কথা লিখেছিলেন (‘আমার মতো হতে চাই’ : দেশ সাহিত্য সংখ্যা ১৩৮৪) । এই লেখাটি থেকে সামান্য কয়েকটি কথা পাঠককে মনে করিয়ে দিতে চাই। যেমন, (এক) শেখরের লেখা তত্ত্বকথার মোড়ক নয়—এটা জেনে রাখতে হবে। গল্পের মধ্যে তত্ত্ব প্রতিষ্ঠায় তাঁর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, সে চেষ্টা তিনি কখনোই করেননি। গল্পের মধ্যে তত্ত্ব গুঁজে দেওয়া অর্থহীন; অনুভূত সত্যের এক-একটি দিক প্রকাশ করাই ছিল তাঁর—লেখকের অভীষ্ট। এই অনুভূত সত্যকে যে কাহিনির আশ্রয় নিয়ে বা কাহিনি অবলম্বন করেই প্রকাশ করা যায় তা নয়,পরিবেশের সাহায্যেও করা যায়।…(দুই) রিয়ালিটি বা বাস্তব সম্পর্কে শেখরের ধারণায় কোনও দ্বিধা নেই। তিনি লেখার ক্ষেত্রে সহজ সরল বাস্তবে বিশ্বাস করেন না। অর্থাৎ আপাতদৃষ্ট প্রত্যক্ষ বাস্তবতার চেয়েও তিনি আন্তরিক জগতের সত্যকেই মূল্য দেন, এই সত্য হল অন্তর্নিহিত বাস্তব। ইনার রিয়ালিটি।…(তিন) তাঁর গল্পে যে সব চরিত্র দেখা দেয়—তাদের কোনো বাঁধাধরা ‘প্যাটার্ন’ নেই, তিনি মনে করেন না—আগে চরিত্র পরিকল্পনা করায় তাঁর কোনও প্রয়োজন আছে। সহজ কথায়, লেখক উদ্দেশ্য সিদ্ধির কাজে চরিত্রকে ব্যবহার করতে রাজি নয়।…এই তিনটি প্রধান কথা ছাড়াও শেখরের লেখাটিতে আরও কিছু কথা ছিল…।”
শেখর বসুর শ্রেষ্ঠ গল্পের সুদীর্ঘ ভূমিকায় লেখকের প্রায় চার দশকের বিভিন্ন গল্পের বিস্তারিত আলোচনা করে বিমল কর ভিন্নধর্মী, শক্তিমান এই লেখকের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন নানা দিক থেকে। লিখেছেন, “শেখরের গোড়ার দিকের লেখায় এক ধরনের বাক্-সংযম ও ইঙ্গিত-প্রাধান্য রয়েছে বলে আমার মনে হয়। যেমন বলি ‘টাঙ্গি’ গল্পটি। এর পরিবেশ,অর্ধস্ফুট ছবি আজও আমায় অভিভূত করে।…
প্রথম দিকের এই সব লেখা শেখরের গল্প লেখার একটি পর্ব। পরবর্তী লেখাকে তার পুরোপুরি অনুসরণ বলা ঠিক হবে না। কোনো সচেতন লেখকই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেন না। কম হোক বেশি হোক একটা পরিবর্তন আসতে থাকে। জীবনের অর্জিত অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিকে তিনি আরও গভীর ও পূর্ণতর করে প্রকাশ করতে চান।…
শেখরের লেখার ধারাবাহিকতার কথা আমি আগে বলেছি। চেষ্টা করেছি বোঝাবার যে, তাঁর লেখার মধ্যে ক্রমশ একটা পরিবর্তন নজরে আসে। আর এখানে এটাও বলা যায় হয়ত, যে, তাঁর এখনকার লেখাগুলির ধরন হয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত। লেখার মধ্যে আঁকা চিত্রগুলির রেখায় ধারালো ভাব নেই, যেন তা মোলায়েম করে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে; অনেক সামান্য বিষয় অন্য এক তাৎপর্য নিয়ে ফুটে উঠেছে গল্পে । আবার বলি, নিজের শিল্পগত ধারণাকে লেখক পালটে ফেলেননি, কিন্তু সেই পুরনো শেখর তখনকার সীমানা ছাড়িয়ে অনেকটা চলে এসেছেন।
শেখরের গল্প লেখার ভাষার আমি বরাবরই অনুরাগী। পরিচ্ছন্ন, সংযত, নিরলঙ্কার তাঁর ভাষা। এমন ভাষা আয়ত্ত করতে হয়; সচেতন হতে হয় লেখককে। এই ভাষা ইঙ্গিত দেয়, আবেগকে উলঙ্গ করে না। শেখরের লেখার অন্যতম আরেক গুণ তিনি স্বল্প কথায় এক-একটি ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারেন আশ্চর্যভাবে। আসলে শেখরের লেখার মধ্যে চিত্র আঁকার একটি ভাব বরাবর থেকে যায়। এখানে তাঁর দক্ষতাকে মেনে নিতেই হবে।”