Home

জীবন, সাহিত্য ও ভালোবাসা

কর্মজীবনের সূত্রপাত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে। পরে ওই সংস্থারই প্রথম শ্রেণীর দুটি ইংরেজি দৈনিক ‘হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড’ ও ‘বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’-এ বারো বছর প্রধান সহ-সম্পাদকের কাজ। কর্মজীবনের পরবর্তী পর্যায়ে যোগ দেন ‘মাসিক আনন্দমেলা’য়। সবশেষে যুক্ত হন আনন্দবাজার পত্রিকার ওভারসিজ এডিশন ‘প্রবাসী আনন্দবাজার’ পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগের সঙ্গে। ওই পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত থাকাকালীন চাকরি থেকে অবসর নেন। এখন সম্পূর্ণ সময়ের লেখক। ‘শাস্ত্রবিরোধী ছোটগল্প আন্দোলন’-এর অন্যতম প্রধান প্রবক্তা। নতুন ধারার গল্পলেখক হিসেবে চিহ্নিত ও সম্মানিত এই লেখকের আটটি গল্পগ্রন্থ আছে। আনন্দ পাবলিশার্স থেকে সম্প্রতি-প্রকাশিত ‘পঞ্চাশটি গল্প’ ও দ্য কাফে টেবলের ’প্রিয় গল্প’ গল্প-সংকলনে লেখকের সব পর্বের নির্বাচিত গল্প পাওয়া যায়।

লেখকের একটি বড় পাঠকগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। সমালোচক ও আলোচকরা বরাবরই লেখকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিশিষ্ট লেখক বিমল কর লিখেছেন, “ শেখরের গল্প লেখার ভাষার আমি বরাবরই অনুরাগী। পরিচ্ছন্ন, সংযত, নিরলঙ্কার তাঁর ভাষা। এমন ভাষা আয়ত্ত করতে হয় ; সচেতন হতে হয় লেখককে। এই ভাষা ইঙ্গিত দেয়, আবেগকে উলঙ্গ করে না। শেখরের লেখার অন্যতম আরেক গুণ তিনি স্বল্পকথায় এক-একটি ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারেন আশ্চর্যভাবে। আসলে শেখরের লেখার মধ্যে চিত্র আঁকার একটি ভাব বরাবর থেকে যায়। এখানে তাঁর দক্ষতাকে মেনে নিতেই হবে।” প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘জার্নাল’ গ্রন্থে লিখেছেন, “মনে পড়ছে, কদিন আগে শেখর একটি গল্প লিখেছে ‘মাঝখান থেকে’ (দেশ পত্রিকায়), বেশ জোরালো গল্প, সে-গল্পে আছে না-বলে কথা বোঝাবার এক বিপজ্জনক বিবরণ।” নতুন ধারার শক্তিশালী সর্বজনশ্রদ্ধেয় লেখক জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী একটি ব্যক্তিগত চিঠিতে তাঁর জীবনীকার নিতাই বসুকে লিখেছিলেন, ‘‘আমার প্রিয় তরুণ লেখকদের তালিকায় শেখর বসুর নামটা যোগ করবেন।” ১-১২-১৯৮১ সালে লিখিত এই চিঠিটি জ্যোতিরিন্দ্র প্রয়াত হওয়ার পরে ২০০৭ সালের শারদীয় ‘অনুষ্টুপ’ পত্রিকায় গবেষকের বিস্তৃত নোটসহ ছাপা হয়েছে।

উপন্যাস রচনাতেও বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন শেখর বসু। ১৯৭৪ সালে শারদীয় আনন্দবাজারে পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর উপন্যাস ‘অন্যরকম’ স্বতন্ত্র ধারার উপন্যাস হিসেবে অভিনন্দিত হয়েছিল। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি সম্পর্কে আনন্দবাজার পত্রিকার পুস্তক পরিচয় বিভাগে লেখা হয়ঃ “এমন কিছু উপন্যাস হাতে আসে, যা পড়তে পড়তে চমকে যেতে হয়। মুখ ফুটে বলতেই হয়, বাঃ! এটা তো অন্যরকম, ঠিক এ ভাবে আগে তো কেউ কলম ধরেনি।’’ লেখকের প্রথম উপন্যাস ‘সিঁড়ি’, পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। এটি ‘ফিরে এলাম’ নামে দিল্লির ‘প্রাংশু’ প্রকাশনা থেকে ১৯৮৩ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

বিশিষ্ট লেখক ও সমালোচক শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘সমালোচনাচর্চা’ গ্রন্থে এই উপন্যাসটি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। লিখেছেন, “আমার ধারণা, এর আগে বা পরে এমন অদ্ভুত মায়াবী উপন্যাস আর কেউ লেখেননি বাংলা ভাষায়।” লেখকের উপন্যাসের সংখ্যা কমবেশি ত্রিশটি। উল্লেখযোগ্য অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আছে ‘তনুশ্রীর জীবন’, ‘সাত ঘড়া মোহর’, ‘সুখের কাছে’ ইত্যাদি। ‘দ্য কাফে টেবল’ প্রকাশনা সংস্থা থেকে সম্প্রতি লেখকের উপন্যাসসমগ্রর দুটি খণ্ড প্রকাশিত—‘উপন্যাসসমগ্র ১’ ও ‘উপন্যাসসমগ্র ২’। এই প্রকাশনা সংস্থা থেকে তৃতীয় খণ্ডের প্রকাশ আসন্ন।

রহস্য-উপন্যাস রচনাতেও নিজস্ব ধারা অক্ষুণ্ণ রেখেছেন লেখক। আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় বিভাগে লেখক চারটি ধারাবাহিক রহস্যকাহিনি লিখেছেন। রহস্যকাহিনিগুলি পাঠকমহলে বিপুল আলোড়ন ফেলেছিল। প্রথম রহস্যকাহিনি ‘অপরাধী চিহ্ন রাখেনি’ ; দ্বিতীয় ধারাবাহিক ‘রহস্যের পাঁচ ঠিকানা’। তৃতীয় ধারাবাহিক ‘ব্যবসার নাম শুভবিবাহ’ ; চতুর্থ ধারাবাহিক ‘জলে দস্যু ডাঙায় বাঘ’। প্রথম ও তৃতীয় ধারাবাহিক আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে ধারাবাহিক বেতারনাট্য হিসেবে সম্প্রচারিত হয়। ‘সাপ্তাহিক বর্তমান’, ‘সানন্দা’,‘তথ্যকেন্দ্র’, ‘উত্তরবঙ্গ’ ইত্যাদি পত্রিকাতেও রহস্যকাহিনি লিখেছেন লেখক। সম্প্রতি ‘প্রতিভাস’ প্রকাশনা সংস্থা থেকে ‘রহস্য উপন্যাস’গুলি চারটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। খণ্ডগুলিতে মোট রহস্য উপন্যাসের সংখ্যা বারো। এই প্রকাশনা সংস্থা থেকে পঞ্চম খণ্ডের প্রকাশ আসন্ন।

লেখকের কয়েকটি নতুন বই